ব্যবহারভেদে কৃষি ফসলের শ্রেণিবিন্যাস

এসএসসি(ভোকেশনাল) - এগ্রোবেসড্ ফুড -১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

এক্ষেত্রে সাধারণত ফসলের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহারের উদ্দেশ্য বিবেচনা করে ফসলগুলোকে শ্রেণিবিভাগ করা হয়। এভাবে শ্রেণিবিভাগ করা ফসলগুলোর মধ্যে নিম্নের শ্রেণিগুলোই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—

১) দানা জাতীয় শস্য (Cereals ) : ল্যাটিন শব্দ সিরিস অর্থ শস্যের দেবী (Ciris) হতে Cereals নামকরণ করা হয়েছে। আমাদের প্রধান দানা ফসলগুলো এই শ্রেণিতে পড়ে। এগুলো Gramineae বা ঘাস জাতীয় ফসলের অন্তর্ভূক্ত। এই শস্যগুলোর মধ্যে আমাদের শরীরে শক্তিবর্ধক ও তাপরক্ষক শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ প্রচুর পরিমানে থাকে। তাছাড়া প্রোটিন, চর্বি, খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন জাতীয় খাদ্য উপাদানও অল্প পরিমাণে থাকে। ধান, গম, যব, ভুট্টা, চিনা, কাউন ইত্যাদি দানা জাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত।

২) ডাল জাতীয় শস্য (Pulses) : ছোলা, মসুর, মুগ, মটরশুঁটি, মাষকলাই, শিম, অড়হর প্রভৃতি উপাদান ডালজাতীয় শস্যের অন্তর্ভূক্ত। ডাল জাতীয় শস্যে প্রচুর পরিমাণে আমিষ জাতীয় খাদ্য উপাদান থাকায় চাল বা রুটির সাথে ডাল মিশিয়ে খেলে তা শুধু মুখরোচকই হয় না, বরং সুষম খাদ্যও হয়। অধিকাংশ ডাল জাতীয় শস্যের শিকড়ে গুটি বা Nodule থাকে। এই গুটিগুলোতে এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়া বাস করে যারা বাতাস হতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে গাছকে সরবরাহ করে। এই জাতীয় ফসল চাষে মাটি উর্বর হয় এবং পরবর্তী ফসলের উপকার করে। ডাল জাতীয় ফসলকে লিগুম (legume) ফসল ও বলা হয়।

৩) তেলবীজ (Oils) : কিছু কিছু শস্যের দানায় তেল সঞ্চিত থাকে। নাতিশীতোঞ্চ অঞ্চলে তেলবীজ ভালো জন্মে। আমাদের দেশে দৈনন্দিন রান্নার কাজে এবং গ্লিসারিন, সাবান, বার্নিস প্রভৃতি শিল্পের চাহিদা মেটাতে তৈলের প্রয়োজন। স্নেহ জাতীয় খাদ্য হিসেবে তেল আমাদের দেহের জন্য অপরিহার্য। সরিষা, নারিকেল, চীনাবাদাম, সূর্যমুখী, তিল ইত্যাদি প্রধান তেল ফসল ।

৪) চিনি ফসল (Sugar Crops) : এ জাতীয় ফসলের মধ্যে আঁখ (Sugar Cane) ও বাঁটই প্রধান। চিনি ও গুড় প্রস্তুতের জন্য আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে আঁখের চাষ হয়ে থাকে। বীট আমাদের দেশে সবজি হিসেবেই ব্যবহার হয় কিন্তু শীতপ্রধান দেশে চিনি উৎপাদনের জন্য বীটের চাষ হয়। তাছাড়া তাল ও খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহ করে কিছু পরিমাণ গুড় বা অপরিশোধিত লাল চিনি তৈরি করা হয় । 

৫) আঁশ বা তন্তুজাতীয় ফসল (Fibre crops) : সুতা, বস্ত্র, দড়ি, চট, বস্তা, মাদুর ইত্যাদি জিনিস তৈরির জন্য এ জাতীয় ফসলের চাষ করা হয়। তুলা, পাট, মেস্তা, শণ, তিসি প্রভৃতি আঁশ জাতীয় ফসলের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর মধ্যে তুলা ও পাট বহুল ব্যবহৃত। 

৬) নেশা বা মাদকদ্রব্য ফসল (Narcotics) : এ ফসলগুলো সাময়িক উত্তেজনা, আরাম, উৎসাহ সৃষ্টিকারী নেশা ও মাদকতা জাতীয় ফসল যেমন- তামাক, আফিম, ভাঙ, গাঁজা প্রভৃতি। তামাকের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে বর্তমানে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। 

৭) সবজি জাতীয় ফসল (Vegetables) : আলু, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, মূলা, শালগম, গাজর, মিষ্টি আলু প্রভৃতি সবজি জাতীয় ফসলের অন্তর্ভুক্ত। শাক-সবজি কেবল অর্থকরী ফসলই নয়, মানুষের খাদ্যে এগুলো প্রচুর পুষ্টি জোগায়। শাক-সবজিতে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে যা মানুষের শরীর স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ রাখে। 

৮) পানীয় ফসল (Beverages) : পানীয় দ্রব্য বলতে সাধারণত পান করা হয় এরূপ খাদ্যকে বুঝায় । এ ফসলগুলো হচ্ছে চা ও কফি। 

৯) পশু খাদ্য (Fodder Crops) : পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য যে সমস্ত ফসল আবাদ করা হয় তাকে পশুখাদ্য ফসল বলে। যেমন- নেপিয়ার ঘাস, ইপিল ইপিল, ভুট্টা, গো-মটর (Cow Pea) জোয়ার, কলাই, সরগম ইত্যাদি পশু খাদ্যের উদাহরণ। 

১০) সবুজ সার জাতীয় ফসল (Green Manure Crops ) : ধৈঞ্চা, বরবটি, শিম, কলাই, ফেলন, অডহর, শন পাট ইত্যাদি সবুজ সার জাতীয় ফসল। এ সকল গাছের পাতা ও ডাটা কেটে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়াকে সবুজ সার বলে। সাধারণত শিকড়ে গুটি উৎপন্নকারী ডাল জাতীয় ফসলই সবুজ সারের জন্য উত্তম। বীজ বপনের ২ মাস পর অর্থাৎ গাছে ফুল আসার পূর্বেই কেটে চাষ ও মই দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে জমিতে জৈব পদার্থ ও নাইট্রোজেনের আধিক্য বাড়ে । 

১১) মসলা জাতীয় ফসল (Spices crops ) : খাদ্য সুস্বাদু, সুগন্ধী ও খাদ্য সংরক্ষণের কাজের জন্য যে সকল ফসল ব্যবহার করা হয় তাদেরকে মসলা ফসল বলে। যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া, লবঙ্গ, দারুচিনি, জিরা, তেজপাতা ইত্যাদি। খাদ্যে মসলার ব্যবহারে ফসলের বাজে গন্ধ দূর হয়ে খাদ্য সুস্বাদু ও সুগন্ধী হয়। 

১২) ফল ও বাগিচার ফসল (Plantation crops) : স্থায়ী ফল বাগান ও বাগিচার চাষ করার জন্য বহু বর্ষজীবী ফসলের চাষ হয়। যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল, লেবু, লিচু, নারিকেল ইত্যাদি এ জাতীয় ফল।

Content added By
Promotion